ব্লগিং কেন করি? ডায়েরী কেন লিখি?
অনেক ছোটতে, সম্ভবত ফোরে বা ফাইভে থাকতে কিভাবে যেন একটা ডায়েরী পেয়েছিলাম। সেই থেকে শুরু। প্রথম প্রথম খালি কবিতা লিখতাম। কবিতার ক-ও হতোনা, শুধু ছন্দের মিল দেবার চেষ্টা করতাম। অনেকটা “চলিতে চলিতে দেখিলাম খাসি / আমি তোমায় ভালবাসি” টাইপ। যদু-মদু-কদু ধরণের কবিতা লিখতাম আর আম্মু উৎসাহ দিত। তখন আমি ভাবতাম দিন দিন বিশাল কবি হয়ে উঠছি, আরেকটু হলেই রবীন্দ্রনাথকে ছাড়িয়ে যাব। এক সময় এগুলোতে এত বেশি এডিক্টেড হয়ে গেলাম যে, আব্বু কবিতা লেখার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো। রাগ করে নিজের লেখা সবগুলো কবিতা পুড়িয়ে দিয়েছিলাম সেদিন। সেখানেই আমার কবি অধ্যায়ের সমাপ্তি।
এরপর ডায়েরী অধ্যায়। এইটে বৃত্তি না পাওয়ায় নিজের ভেতর এক ধরণের হীণমন্যতা ও অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু করলো। তাই কারও সাথে সেভাবে মিশতামনা তখন। নিজেকে অনেক ছোট মনে হতো। একাকীত্ব কাটানোর জন্য ডায়েরী লিখতাম তখন। হঠাৎ একদিন মনে হলো, আমার এই লেখাগুলো যদি কেউ পড়ে ফেলে? impossible! আমি আমার লেখা কাউকে পড়তে দিতে চাইনা। তাই প্রতিটি অক্ষরকে নিজের মতো করে বানিয়ে নিলাম যেমন আমি “অ” কে লিখতাম নতুন প্রতীকে। এরকম সবগুলো অক্ষরের জন্যই আলাদা এবং নতুন প্রতীক বানালাম। সেই নতুন অক্ষরগুলো দিয়ে ডায়েরী লিখতাম। এই অক্ষরগুলোতে তখন বেশ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে গেছিলাম । এখন অবশ্য সেগুলো ভুলে গেছি। নিজেই হয়তো নিজের লেখার মর্মোদ্ধার করতে পারবোনা ।
মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, আমি ব্লগে কেন লিখি? যখন ব্লগিং আরম্ভ করেছিলাম তখন উদ্দেশ্য ছিল জ্ঞান অর্জন। বিশেষ করে বইয়ের ডাউনলোড লিংক চেয়ে পোস্ট দিতাম। এই। মাঝখানে সামহোয়্যারইনে যখন লিখতাম তখন ব্লগিংটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নিজের জন্য লেখা থেকে হঠাৎ পাঠকের জন্য লেখা আরম্ভ করলাম। যে জিনিসগুলো মানুষের কাজে লাগতে পারে বলে মনে হতো সেগুলো নিয়ে পোস্ট দিতাম। মাঝে সেখানকার পরিবেশের উপর বিরক্ত ছিলাম। শেষমেস ব্যান খেলাম।
এখন ব্লগিং কেন করি? এখন ব্লগিং করি নিজের জন্যই। এখন মনে হয়, আমার ধারণাগুলো ভবিষ্যতে কারো কাজে লাগবে। হয়তোবা আমার মতোই কোন একজনের অথবা আমার ছেলে-মেয়েদের। ছেলে-মেয়ের কথা শুনে হাসি পাচ্ছে? হাসি পাবারই তো কথা। এখনও বিয়ে হতেই কত দেরি, আবার ছেলেমেয়ে! যাহোক, হাস্যকর হলেও সত্য- আমি আমার ছেলেমেয়ের জন্যও ব্লগ লেখি। আমার কেন জানি মনে হয় আমার এখনকার কিছু চিন্তাধারা তাদের খুব কাজে লাগবে। সেজন্যই নিজের ডায়েরী ব্লগে ওপেন করে দিই। আমি আমার কাজ ঠিকমতো করার চেষ্টা করি, বাকি দায়িত্ব ওয়ার্ডপ্রেসের।
হে ওয়ার্ডপ্রেস,
তুমি আমার ডায়েরী ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখে দিও তোমার কাছে। আমার সন্তানকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝিয়ে দিও এর প্রতিটি অক্ষর।